শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তম অধ্যায় – বিজ্ঞান যোগ (বাংলা গীতা) (শ্লোক ১ – ৩০ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা)

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ

 অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
(মূল সংস্কৃত শ্লোক  অনুবাদ)
Krishna Photo

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তম অধ্যায় – বিজ্ঞান যোগ (বাংলা গীতা)
(শ্লোক ১ – ৩০ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা)


🎬 Intro (ইনট্রো)

“🌸 ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় 🌸
আজ আমরা পাঠ করব শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তম অধ্যায় – বিজ্ঞান যোগ
এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সমন্বিত শিক্ষা দিচ্ছেন।
কিভাবে ভক্তি, জ্ঞান, প্রকৃতি ও ভগবানের সর্বব্যাপী শক্তি বুঝতে হবে – তাই এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
চলুন, মূল সংস্কৃত শ্লোক, বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সহ আমরা একে একে পাঠ করি।”




ধ্যায়-বিজ্ঞান-যোগ-(Bangla Gita) 


 ১।।
অনুবাদঃ শ্রীভগবান বললেন- হে পার্থ! আমাতে আসক্তচিত্ত হয়ে, আমাতে মনোনিবেশ করে যোগাভ্যাস করলে, কিভাবে সমস্ত সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে, তা শ্রবণ কর।

২।।
অনুবাদঃ আমি এখন তোমাকে বিজ্ঞান সমন্বিত এই জ্ঞানের কথা সম্পূর্ণরূপে বলব, যা জানা হলে এই জগতে আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না।

৩।।
অনুবাদঃ হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন, আর সেই প্রকার যত্নশীল সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিৎ একজন আমাকে অর্থাৎ আমার ভগবৎ-স্বরূপকে তত্ত্বত অবগত হন।

।৪।।
অনুবাদঃ ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার-এই আট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত।

৫।।
অনুবাদঃ হে মহাবাহো! এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্টা প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য-স্বরূপা ও জীবভূতা; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জগৎকে ধারণ করে আছে।
 
৬।।
অনুবাদঃ আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। অতএব নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো যে, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ।

৭।।
অনুবাদঃ হে ধনঞ্জয়! আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনই সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করে।

৮।।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! আমিই জলের রস, চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা, সর্ব বেদের প্রণব, আকাশের শব্দ এবং মানুষের পৌরুষ।

৯।।
অনুবাদঃ আমি পৃৃথিবীর পবিত্র গন্ধ, অগ্নির তেজ, সর্বভূতের জীবন এবং তপস্বীদের তপ।

১০।।
অনুবাদঃ হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন কারণ বলে জানবে। আমি বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবং তেজস্বীদের তেজ।

১১।।
অনুবাদঃ হে ভরতর্ষভ! আমি বলবানের কাম ও রাগ বিবর্জিত বল এবং ধর্মের অবিরোধী কামরূপে আমি প্রাণীগণের মধ্যে বিরাজমান।

১২।।
অনুবাদঃ সমস্ত সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাবসমূহ আমার থেকেই উৎপন্ন বলে জানবে। আমি সেই সকলের অধীন নই, কিন্তু তারা আমার শক্তির অধীন।

১৩।।
অনুবাদঃ (সত্ত্ব, রজ, ও তম) তিনটি গুণের দ্বারা মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগৎ এই সমস্ত গুণের অতীত ও অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।


১৪।।
অনুবাদঃ আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।
 

১৫।।
অনুবাদঃ মূঢ়, নরাধম, মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসম্পন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতকারীরা কখনও আমার শরণাগত হয় না।


১৬।।
অনুবাদঃ হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জুন! আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী-এই চার প্রকার পুণ্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমার ভজনা করেন।

১৭।।
অনুবাদঃ এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে নিত্যযুক্ত, আমাতে একনিষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ। কেন না আমি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়।
 

 
১৮।।
অনুবাদঃ এই সকল ভক্তেরা সকলেই নিঃসন্দেহে মহাত্মা, কিন্তু যে জ্ঞানী আমার তত্ত্বজ্ঞানে অধিষ্ঠিত, আমার মতে তিনি আমার আত্মস্বরূপ। আমার অপ্রাকৃত সেবায় যুক্ত হয়ে তিনি সর্বোত্তম গতিস্বরূপ আমাকে লাভ করেন।

১৯।।
অনুবাদঃ বহু জন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্ব কারণের পরম কারণ রূপে জেনে আমার শরণাগত হন। সেইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ।

২০।।
অনুবাদঃ জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।

২১।।
অনুবাদঃ পরমাত্মরূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।

২২।।
অনুবাদঃ সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।

।২৩।।
অনুবাদঃ অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদের আরাধনা লব্ধ সেই ফল অস্থায়ী। দেবোপাসকগণ দেবলোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তের আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।

অনুবাদঃ বুদ্ধিহীন মানুষেরা, যারা আমাকে জানে না, মনে করে যে, আমি পূর্বে অব্যক্ত নির্বিশেষ ছিলাম, এখন ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা আমার অব্যয় ও সর্বোত্তম পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।
২৫।।
অনুবাদঃ আমি মূঢ় ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনও প্রকাশিত হই না। তাদের কাছে আমি আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়ার দ্বারা আবৃত থাকি। তাই, তাঁরা আমার অজ ও অব্যয় স্বরূপকে জানতে পারে না।
২৬।।
অনুবাদঃ হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবানরূপে আমি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে অবগত। আমি সমস্ত জীব সম্বন্ধে জানি, কিন্তু আমাকে কেউ জানে না।

২৭।।
অনুবাদঃ হে ভারত! হে পরন্তপ! ইচ্ছা ও দ্বেষ থেকে উদ্ভত দন্দ্বের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে সমস্ত জীব মোহাচ্ছন্ন হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
২৮।।
অনুবাদঃ যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়েছে এবং যাঁরা দ্বন্দ্বমোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা দৃঢ় নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ভজনা করেন।
।২৯।।
অনুবাদঃ যে সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি জরা ও মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাকে আশ্রয় করে যত্ন করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ব্রক্ষভূত, কেন না তাঁরা অধ্যাত্মতত্ত্ব ও কর্মতত্ত্ব সব কিছু সম্পূর্ণরূপে অবগত।
৩০।।
অনুবাদঃ যাঁরা অধিভূত-তত্ত্ব, অধিদৈব-তত্ত্ব ও অধিযজ্ঞ-তত্ত্ব সহ আমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে অবগত হন, তাঁরা আমাতে আসক্তচিত্ত, এমন কি মরণকালেও আমাকে জানতে পারেন।

🪔 End Script (সমাপ্তি অংশ)

“🌺 আজকের পাঠ সমাপ্ত 🌺
আমরা পাঠ করলাম —
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তম অধ্যায় – বিজ্ঞান যোগ
শ্লোক ১ থেকে ৩০ পর্যন্ত

এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের জানালেন—

  • কিভাবে জ্ঞান ও বিজ্ঞান মিলিয়ে তাঁকে জানা যায়।

  • তাঁর ভিন্না ও পরা প্রকৃতির শিক্ষা।

  • ভক্তি, তপ, জ্ঞান ও ভক্তদের শ্রেণিবিভাগ।

  • ভক্তি ছাড়া দেবোপাসনার সীমাবদ্ধতা।

  • এবং ভক্তির মাধ্যমে মোক্ষলাভের চূড়ান্ত পথ।

🙏 পরবর্তী পর্বে আমরা পাঠ করব অষ্টম অধ্যায় – অক্ষর-ব্রহ্ম যোগ
শ্রবণ করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।

গীতা-সপ্তম অ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

📿 শ্রীকৃষ্ণের ৩০টি অনুপ্রেরণামূলক বাণী (বাংলায় সংক্ষিপ্ত)

📜 শ্রীমদ্ভগবদগীতার অমূল্য বাণী 📜

কিভাবে গীতার শ্লোক মনোভাবের উন্নতি ঘটায়